ঢাকা , রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫ , ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​ঘরে ফিরে নতুন সংকটে ফেনীর বন্যাদুর্গতরা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ১১:২০:৫১ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ০১:০০:০৬ অপরাহ্ন
​ঘরে ফিরে নতুন সংকটে ফেনীর বন্যাদুর্গতরা সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলেও ঘরে ফিরে নতুন সংকটে পড়েছেন ফেনীর দুর্গত মানুষজন। কর্দমাক্ত ঘরবাড়ি, ভাঙাচোরা আসবাবপত্র আর পঁচে যাওয়া খাদ্যসামগ্রী নিয়ে শুরু হয়েছে বেঁচে থাকার নতুন লড়াই। টানা বৃষ্টি এবং ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত হয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এতে ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এই বন্যায় ফেনী জেলায় কমপক্ষে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন এবং ৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ফসল, সড়ক, সেতু ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। ফুলগাজী বাজারের শ্রীপুর সড়কে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ১৫টি দোকান। দোকান হারানো ব্যবসায়ীরা এখনও নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে খুঁজে ফিরছেন তাদের জীবিকার স্থান। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আবদুল গফুর বলেন, ‘একদিনে দোকান গেলো নদীতে। এত বছর বসে ছিলাম এখানে। এখন হাওয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। সংসারে একমাত্র আয় ছিল এটা, এখন পুরো পরিবার নিয়ে চিন্তায় আছি।’

ফুলগাজী উপজেলার গজারিয়া গ্রামের গৃহবধূ শাহিদা আক্তার বলেন, ‘পানি নেমে গেছে, কিন্তু ঘরে ঢোকা যাচ্ছে না। মাটি, কাদা, পঁচা খাবারের গন্ধে শিশুদেরও অসুস্থ লাগছে। আশ্রয়কেন্দ্রেও এখন তেমন কিছু নেই।’ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, ‘মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধে অন্তত ১৪টি জায়গায় ভাঙন ধরেছে। এর ফলে ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। আমরা জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি। তবে টেকসই বাঁধ ও নদী খননের কাজ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হতে হবে।’

স্থানীয়রা বলছেন, বারবার এমন দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কার্যকর তদারকি। ফুলগাজীর সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল রসুল গোলাপ বলেন, ‘ফুলগাজীর মানুষ এখন ত্রাণ চায় না, তারা চায় টেকসই বেড়িবাঁধ। নদীখনন, বাঁধের মেরামত আর সঠিক তদারকি না থাকলে আমরা প্রতি বছর ডুববো– এই বাস্তবতা এখন মানতেই হবে।’ শনিবার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেন, ‘কেউ বলছেন, ত্রাণ লাগবে না, শুধু বাঁধ দিন। আমি বলছি,দুটোরই দরকার। এখন মানুষকে বাঁচাতে হবে ত্রাণ দিয়ে, পরে জীবন ও জীবিকার জন্য লাগবে টেকসই বেড়িবাঁধ।’ পানি নামলেও অনেক এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ নেই, অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর দিন পার করছেন।

বন্যাদুর্গত ফুলগাজীর আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে ইউএনও ফারিয়া ইসলাম বলেন, ‘এখনও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু হয়নি। পানি নামলেও অনেক ঘর বসবাসযোগ্য নয়। আমরা বিদ্যুৎ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ সমন্বিতভাবে কাজ করছি।’ পরশুরামের ইউএনও আরিফুল ইসলাম জানান, ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় অনেক কিছুই কম পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ